Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ফল উৎপাদনে বিপুল অগ্রগতি ও সম্ভাবনা

ফল উৎপাদনে বিপুল অগ্রগতি ও সম্ভাবনা
ড. জাহাঙ্গীর আলম
পঞ্জিকান্তÍরে জ্যৈষ্ঠ মাস মধুমাস। বিভিন্ন রসালো ফলের প্রচুর জোগান শুরু হয় জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরু থেকে। এখন নতুন প্রযুক্তি সম্প্রসারণের ফলে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেও ফলের অঢেল সরবরাহ থাকে বাজারে। তাই মধুমাস এখন সম্প্রসারিত। বাংলাদেশে ফলের উৎপাদন প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টন। এর ৫০ শতাংশই উৎপাদিত হয় জ্যৈষ্ঠ থেকে শ্রাবণ মাসের মধ্যে। বাকি ৫০ শতাংশ উৎপাদিত হয় অবশিষ্ট ৯ মাসে। ফল উৎপাদনে পৃথিবীর প্রথম সারির ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। গত ১২ বছরে এ দেশে ফল উৎপাদন বৃদ্ধির হার গড়ে ১০ শতাংশের উপরে ছিল। দ্রুত উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় ফলের মাথাপিছু প্রাপ্যতা সম্প্রতি অনেক বেড়েছে। তাতে হ্রাস পেয়েছে আমাদের পুষ্টিহীনতা। তবু ঘাটতি আছে ফলের। এ দেশে মোট ৭২ জাতের ফল সচরাচর দৃষ্টিগোচর হয়। এর মধ্যে ৯টি প্রধান এবং ৩৬টি অপ্রধান। প্রধান ফলগুলোর মধ্যে রয়েছে- আম, কলা, কাঁঠাল, আনারস, পেঁপে, পেয়ারা, নারিকেল, কুল ও লিচু। এগুলো প্রায় শতকরা ৭৯ ভাগ জমি দখল করে রয়েছে। অবশিষ্ট শতকরা ২১ ভাগ জমিতে হয় অপ্রধান ফলগুলোর চাষ। অপ্রধান ফলগুলোর মধ্যে যেগুলো সচরাচর দৃশ্যমান সেগুলোর মধ্যে আছে- সফেদা, কামরাঙা, লটকন, আমড়া, বাতাবিলেবু, কদবেল, আমলকী, বাঙ্গি, তরমুজ ইত্যাদি। বাকি ফলগুলো খুবই কম চাষ হয়, যেগুলো আমরা অনেকে চিনি, আবার অনেকেই চিনি না। এগুলোর মধ্যে আছে- অরবরই, গাব, বিলেতি গাব, আতা, শরিফা, কাউফল, তৈকর, চালতা, ডুমুর, পানিফল, মাখনা, বকুল, লুকলুকি, ডেউয়া, করমচা, কাঠবাদাম, গোলাপজাম, তুঁত, মনফল ইত্যাদি। ইদানীং কিছু নতুন ফলের আবাদও হচ্ছে। এদের মধ্যে আছে রাম্বুটান, স্ট্রবেরি, ড্রাগন ফল ও অ্যাভোকেডো। কিছুদিন আগেও প্রতি কেজি ড্রাগন ফলের দাম ছিল ৬০০ টাকা। এখন ঢাকা শহরের অলিতে গলিতে ভ্যানে করে এই ফল বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি। সুলভ মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে স্ট্রবেরিও। এটি আমাদের গবেষণা ও সম্প্রসারণ কর্মসূচি জোরদার করার জন্যই সম্ভব হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে বিদেশি ফল আমদানির পরিমাণ ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। মানুষ আপেল ও আঙ্গুর কেনার পরিমাণ কমিয়ে স্থানীয় পেয়ারা ও বরই বেশি করে কিনে নিচ্ছে। ভোক্তারা মনে করেন, দেশি ফল কেমিক্যাল ও প্রিজার্ভেটিভমুক্ত।
বাংলাদেশে উৎপাদিত প্রধান ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আম। ১৫ মে থেকে শুরু হয় আম পাড়া। প্রথমে গুটি, হিমসাগর, গোপালভোগ, মিশিভোগ, ল্যাংড়া ইত্যাদি আগাম জাতের আমগুলো পেড়ে নেয়া হয়। তারপর আসে হাঁড়িভাঙা ও আ¤্রপালি। তারপর ফজলি আম। বারি আম-৪ ও আশ্বিনি আসে আরও কিছুদিন পর। খিরসাপাত আম বাংলাদেশের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃত। এই আম শ্বাস ও আশবিহীন, রসালো। গন্ধে বেশ আকর্ষণীয় এবং স্বাদে মিষ্টি। হাঁড়িভাঙা আমও অত্যন্ত সুস্বাদু ও আঁশবিহীন। আগে উত্তরবঙ্গের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোরেই ভালো জাত ও মানের আম হতো বেশি। এখন নতুন প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ঘটায় সারাদেশেই ভালো জাতের আম উৎপাদিত হচ্ছে। সাতক্ষীরা ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় উন্নত জাতের আম উৎপাদিত হচ্ছে প্রচুর। বিদেশেও তা রফতানি হচ্ছে। বাংলাদেশে আমের উৎপাদন প্রায় ২৫ লাখ টন। এরপর আছে কলা। মোট উৎপাদন প্রায় ১৯ লাখ টন। পেঁপে, পেয়ারা ও আনারসে উৎপাদন যথাক্রমে ১০ লাখ, ৫ লাখ ও ৪ লাখ টন। কাঁঠাল উৎপাদনে বিশ্বে আমরা দ্বিতীয় এবং আম উৎপাদনে সপ্তম স্থানে অবস্থান করছি। স্বাদে ও জনপ্রিয়তায় আমাদের দেশে লিচুর অবস্থানও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মোট উৎপাদন প্রায় আড়াই লাখ টন। আম ও লিচুর পর বাজারে আসে কাঁঠাল। এটি আমাদের জাতীয় ফল। মোট উৎপাদন পায় ১৮ লাখ টন। পেঁপে, কলা ও আনারস সারা বছরই উৎপাদিত হয় আমাদের দেশে। মধু মাসে এদের সরবরাহ বেশি থাকে। এ সময় লটকন, তরমুজ ও বাঙ্গির সরবরাহও কম নয়। সবকিছু মিলে বিভিন্ন ফলে ভরা থাকে মধু মাস। এগুলো খুবই পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। এ সময়ের উষ্ণ পরিবেশে মানুষকে পরম শান্তি দান করে বিভিন্ন রসালো ফল।
ফলের উৎপাদন কৃষক পর্যায়ে বেশ লাভজনক। বাংলাদেশে ফলের হেক্টরপ্রতি উৎপাদন অন্যান্য প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদনের চেয়ে বেশি। নিট আয়ও বেশি। বর্তমানে এ দেশে ধান ও গমের হেক্টরপ্রতি উৎপাদন গড়ে ২.৫ থেকে ৩.৫ মেট্রিক টন। সে ক্ষেত্রে কলার উৎপাদন হেক্টরপ্রতি প্রায় ১৬ মেট্রিক টন। আমের উৎপাদন ৫ মেট্রিক টন। এ দুইটি ফলের নিট আয়ের পরিমাণও ধান উৎপাদনের তুলনায় যথাক্রমে ৩.৬ ও ২.৮ গুণ বেশি। কাঁঠালের ক্ষেত্রে তা ৩.২ গুণ বেশি। আমের উৎপাদন খরচ প্রতি কেজি প্রায় ২৫ টাকা। খামার প্রান্তে প্রতি কেজির মূল্য দাঁড়ায় ৪০ টাকা। ভোক্তা পর্যায়ে এর দাম শুরুতে থাকে ১০০ টাকা বেশি। ভরা মৌসুমে তা নেমে আসে ৫০ টাকায়। জাতভেদে মূল্যের পার্থক্য থাকে বিস্তর। গড়ে তা দাঁড়ায় প্রতি কেজি ৬০ টাকা। অপরদিকে ভরা উৎপাদন মৌসুমে বোম্বাই, মাদরাজি, বেদানা ও চায়না জাতের ভালোমানের ১০০ লিচুর দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকা থাকে খামার প্রান্তে। ঢাকার বাজারে তা বিক্রি হয় ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায়। মৌসুমি ফল পাকা ও পাড়ার সাথে সাথেই বাজারজাত করতে হয়। এর মধ্যে আম, আনারস, লিচু ও কাঁঠাল বাজারজাত করতে হয় জরুরি ভিত্তিতে। নতুবা পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। সাধারণত মৌসুমি ফল প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ অপচয় হয়। বাজারজাতকরণের অনিশ্চয়তায় তা ৪০-৪৫ শতাংশে বৃদ্ধি পায়। তখন কৃষকের লোকসান হয় বিস্তর। এমন সংকটকালে ফল বিপণনে সরকারি হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়ে।
ফলের বিপণন পার্থক্য বেশি। এর কারণ পচনশীলতা ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এর পরিমাণ বেড়ে যায়। তাতে কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়, ভোক্তাদের দিতে হয় অনেক বেশি দাম। এমন পরিস্থিতিতে ব্যক্তি বিপণন খাতের পাশাপাশি সরকারের কৃষি বিপণন বিভাগ, হর্টেক্স ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন এলাকার খামারপ্রাপ্ত থেকে আম, কাঁঠাল ও আনারস কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে তা বাজারজাত করা যেতে পারে। গরিব মানুষের ত্রাণ হিসেবেও আম-কাঁঠাল বিতরণ করা যেতে পারে। তা ছাড়া, নওগাঁ, সাতক্ষীরা, গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর ও পার্বত্য জেলাসমূহ থেকে আম, কাঁঠাল ও আনারস পরিবহনের জন্য বিআরটিসির উদ্যোগে ট্রাক চলাচলের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। গত বছর  আম পরিবহনের জন্য বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু করেছিল রেলওয়ে বিভাগ। কিন্তু ব্যবস্থাপনার সমস্যার কারণে তা সুখকর হয়নি। অনলাইনেও আমসহ অন্যান্য ফল বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু কুরিয়ার সার্ভিসের গাফিলতির জন্য তা সুনাম হারিয়েছে। তাই ব্যক্তি পর্যায়ে সড়কপথে ফল পরিবহনকে নির্বিঘœ ও সুলভ করা উচিত। তদুপরি আম ও অন্যান্য মৌসুমি ফল প্রক্রিয়াজাতকরণে ও সংরক্ষণে নিয়োজিত বৃহৎ কোম্পানিগুলো ভরা মৌসুমে তাদের ক্রয় বাড়িয়ে স্থানীয় ফলের দরপতন ও অপচয় থেকে    কৃষকদের রক্ষা করা উচিত। তাছাড়া দেশের ফলচাষিদের সরকারি প্রণোদনা প্যাকেজ ও কৃষি ভর্তুকির আওতাভুক্ত করা উচিত।
ভরা মৌসুমে ফলের দরপতন ঠেকানোর একটি অন্যতম পথ হচ্ছে রফতানি বাড়ানো। বর্তমানে ফল রফতানি করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে বাংলাদেশ। বছরের পর বছর এ আয় দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের মৌসুমি ফল এরই মধ্যে যুক্তরাজ্য, জার্মান, ইতালি, ফ্রান্স, সৌদিআরব, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ওমান এবং অন্যান্য  দেশে রফতানি হচ্ছে। রফতানিকৃত ফলগুলোর মধ্যে রয়েছে আম, কাঁঠাল, জড়ালেবু, এলাচি লেবু, কুল, সাতকরা, আমড়া, সুপারি, জলপাই, পেয়ারা ও কলা। দিনের পর দিন এগুলোর চাহিদা বাড়ছে বিদেশে। আগামী দিনে চীন, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম এবং নেদারল্যান্ডসসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে বাংলাদেশি ফল রফতানির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। গত ৬ বছর যাবত ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আমাদের আম রফতানি হচ্ছে। রাজশাহী ও সাতক্ষীরার চাষিরা অনেক বেশি অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে উত্তম কৃষি চর্চা কার্যক্রম অনুসরণ করে রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন করছেন। বিদেশে এর কদর বৃদ্ধির জন্য আমাদের বিদেশি মিশনগুলো কাজ করতে পারে।
এখন একটি বিশেষ আলোচ্য বিষয় হচ্ছে আম কূটনীতি। গত বছর বাংলাদেশের আম উপহার হিসেবে গেছে ভারত, ভুটান, নেপাল, শ্রীলংকা ও মধ্যপ্রাচ্যে। এই উদ্যোগটি নিয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে প্রতিবেশী ও বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর রাজ্য ও সরকার প্রধানদের আম উপহার পাঠিয়ে আমাদের আনন্দ ও হৃদয়ের উষ্ণতাকে ভাগ করে নিয়েছেন তিনি। তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। এবারও এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে আশা করি। 

লেখক : কৃষি অর্থনীতিবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। সাবেক উপাচার্য, ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ; সাবেক মহাপরিচালক, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান। মোবাইল : ০১৭১৪২০৪৯১০, ই-মেইল : ধষধসল৫২@মসধরষ.পড়স


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon